Just In
কোভিড রোগীর শরীরে সাইটোমেগালো ভাইরাস সংক্রমণ! কী এই রোগ? এর উপসর্গ কী? জেনে নিন বিস্তারিত
করোনা মহামারীতে গোটা দেশ জর্জরিত, এর মধ্যে আবার কয়েকজন কোভিড রোগীর মধ্যে সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই প্রথম ভারতে, দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালে পাঁচজন কোভিড রোগীর মধ্যে সাইটোমেগালো ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। এই সব রোগী প্রথমে কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল, তবে করোনা থেকে সেরে ওঠার কয়েক সপ্তাহ পরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকদের মতানুসারে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাস নাগাদ প্রথম এই বিষয়টি সামনে আসে। করোনা পজিটিভ হওয়ার প্রায় ২০ থেকে ৩০ দিনের পরে পেটে যন্ত্রণা ও রেকটাল ব্লিডিং-এর মতো সমস্যা দেখা গেছে। পাঁচজন সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে, দুজনের যথেষ্ট পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে।
সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus) কী?
সাইটোমেগালো ভাইরাস বা CMV হল ডবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ ভাইরাস, যা হিউম্যান হার্পিসভাইরাস পরিবারের সদস্য। স্বাস্থ্যকর ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ভাইরাস খুবই কম সমস্যা তৈরি করে, তবে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম। বলা হচ্ছে যে, একবার কোনও ব্যক্তি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে, চিরদিনের মতো এই ভাইরাস শরীরে থেকে যায়। এটি সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত, লালা, মূত্র বা শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সাইটোমেগালো ভাইরাসের উপসর্গগুলি কী কী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাইটোমেগালো ভাইরাস সংক্রমণ, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল - গলা ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, ক্লান্তি, ফোলা গ্রন্থি এবং জ্বর। বলা হচ্ছে যে, যেসব স্থানে অনেক সংখ্যক ছোট বাচ্চা থাকে (ডে-কেয়ার সেন্টার বা প্রি-নার্সারি) সেই সকল অঞ্চলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এই সংক্রমণ যদি গুরুতর আকার ধারণ করে, তবে ফুসফুস, লিভার, খাদ্যনালী, পেট, অন্ত্র এবং মস্তিস্কে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
কীভাবে সংক্রমিত হয়?
সংক্রমিত ব্যক্তির লালা, রক্ত, মূত্র, বীর্য, যোনি তরল কিংবা স্তনদুগ্ধের সংস্পর্শে আসার পর, কোনও ব্যক্তি যদি চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এই সাইটোমেগালো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।
এটি করোনা সংক্রমণের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?
গবেষণা বলছে যে, সাইটোমেগালো ভাইরাস মূলত দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বেশি আক্রমণ করে। করোনা ভাইরাসও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বেশি অ্যাটাক করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমিত রোগী যারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা স্টেরয়েড থেরাপিতে ছিলেন এবং কোনও ব্যক্তি অন্তর্নিহিত ক্রনিক ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ, যেমন - আলসারেটিভ কোলাইটিসে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাত শিশুরও এই রোগ হতে পারে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে যাদের, তাদের ক্ষেত্রেও এই সংক্রমণ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
এই সংক্রমণ ধরার জন্য চিকিৎসকেরা রক্ত, লালা ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে পরামর্শ দেয়। যার মধ্যে সিএমভি অ্যান্টিজেন, পিসিআর রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রেটিনায় প্রদাহ পরীক্ষা করতে, চোখের পরীক্ষারও পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
এই সংক্রমনের চিকিৎসা পদ্ধতি
রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু ওষুধের মাধ্যমে উপসর্গগুলির চিকিৎসা করা যেতে পারে। সিএমভি সংক্রমণের প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে, কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইমিউনোকম্পেটেন্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি পরিচালনা ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট থেরাপির প্রয়োজন হয় না।