Just In
Don't Miss
করোনার মাঝে বাড়ছে বার্ড ফ্লুর আতঙ্ক, জানুন কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস এবং এর লক্ষণ
করোনা আতঙ্কের মাঝে দেশের চার রাজ্যে বার্ড ফ্লু আতঙ্ক মাথা চাড়া দিয়েছে। নির্বিচারে মারা যাচ্ছে কাক, মুরগি, হাঁস, ময়ূর। ভারতের রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, কেরালা, মধ্যপ্রদেশেে বহু কাক, হাঁস, মুরগি মারা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও সতর্কতা জারি হয়েছে। বাংলাতেও বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে, আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেইমতো সতর্কতা নেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে। তবে শুধু পাখিদের জন্য নয়, মানুষের জন্যও বিপজ্জনক বার্ড ফ্লু, বলছেন চিকিৎসকেরা। তাহলে জেনে নিন বার্ড ফ্লু কী এবং কেন হয়।
বার্ড ফ্লু কী?
বার্ড ফ্লু একটি ভাইরাল ইনফেকশন, যেটা শুধু পাখিদের মধ্যে নয় অন্যান্য পশু এমনকী মানুষের মধ্যেও হতে পারে। বার্ড ফ্লুর মধ্যে এইচ৫এন১ সাধারণ ফর্ম। সবথেকে বেশি পাখি এই ভাইরাসে মারা যায়, মানুষের শরীরেও দ্রুত ঢুকে পড়তে পারে এই ভাইরাস। ১৯৯৭ সালে প্রথম এইচ৫এন১ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল মানব শরীরে। ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু-র এইচ৫এন১ ভাইরাস ধরা পড়েছিল। ২০১৩ সালে বার্ড ফ্লু-র নয়া স্ট্রেন এইচ৭এন৯ দেখা দেয় চিনে।
বার্ড ফ্লুর লক্ষণ
পাখিদের শরীর থেকে যেকোনও মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে এইচ৫এন১ ভাইরাসটি। এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
কফ
ডায়েরিয়া
জ্বর
মাথার যন্ত্রণা
নাক থেকে জল পড়া
গলা ব্যথা
বমি হওয়া
জয়েন্ট পেন
চোখে ইনফেকশনশিশুদেরও বার্ড ফ্লু হতে পারে। প্রথমে ধরা পড়লে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রম দেখা দিতে পারে বাচ্চা, বড় সকলের।
বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হলে সু্স্থ মানুষের থেকে দূরে থাকা উচিত। চিকিৎসকের কাছে গেলে আগে থেকে জানিয়ে রাখুন, তাহলে সেইমতো সতর্কতা নেবেন চিকিৎসক ও চেম্বারের অন্যান্যরা।
মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু কীভাবে হয়?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আক্রান্ত পাখির মল, নাক, মুখ বা চোখ থেকে নিঃসৃত নোংরা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস। গবেষকরা বলছেন, বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হাঁস, মুরগির ডিম, মাংস থেকে এই রোগ ছড়ায় না। তবে হাফ বয়েল ডিম, বা আধসিদ্ধ মাংস খেলে বার্ড ফ্লু মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই ভালো করে ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া দরকার, মাংস রান্না করলে অবশ্যই ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রান্না করুন।
বার্ড ফ্লুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই এই নিয়মগুলি মেনে চলুন
রিস্ক ফ্যাক্টর
বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত পাখি ১০ দিন পর্যন্ত ভাইরাস ছড়াতে পারে। যাদের ক্ষেত্রে রিস্ক বেশি তারা হলেন -
ক) পোলট্রি ফার্মের মালিক
খ) আক্রান্ত পাখিদের সংস্পর্শে এলে
গ) আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করছেন এমন কোনও স্বাস্থ্যকর্মী
ঘ) বার্ড ফ্লু হয়েছে এমন জায়গায় যদি কেউ গিয়ে থাকেন
ঙ) আধ সিদ্ধ রান্না করা হাঁস বা মুরগির ডিম খেলে
চ) সংক্রামিত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য
কীভাবে ধরা পড়বে কেউ বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হলে?
দ্য সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে, বার্ড ফ্লু চিহ্নিত করতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ/এইচ ৫ টেস্টটির নাম। চার ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে কেউ বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত কিনা। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ/এইচ ৫ টেস্ট ছাড়াও আরও কিছু টেস্ট করাতে পারেন চিকিৎসকরা। সেগুলি হল - অসকালটেশন, হোয়াইট ব্লাড সেল ডিফারেনশিয়াল, বুকের এক্স-রে। এছাড়া হার্ট, কিডনি এবং লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, তা দেখার জন্য চিকিৎসক আরও কিছু টেস্ট করাতে পারেন।
বার্ড ফ্লু-র চিকিৎসা
বার্ড ফ্লু-র বেশ কয়েকটি ভাইরাস আছে, তার চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। তবে সব ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্তের চিকিৎসা শুরু হয়ে যাওয়া দরকার। প্রথমে রোগীকে সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। যাতে তার থেকে আর কারুর শরীরে না ছড়ায় ভাইরাস। আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসক তাকে অ্যান্টি-ভাইরাল, প্রয়োজন পড়লে অক্সিজেনও দেওয়া হতে পারে। তবে শরীরে বার্ড ফ্লু-র ভাইরাস ঢুকলে দেহ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে আক্রান্তের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা।
বার্ড ফ্লু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশে। এই অবস্থায় কীভাবে বার্ড ফ্লু-র হাত থেকে বাঁচবেন, সেটা জানা দরকার।
কীভাবে বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ করবেন?
ক) খোলা জায়গায় বাজারহাট করা
খ) হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে না আসা, সংস্পর্শে এলে প্রোটেকশন নেওয়া
গ) স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, হাত পরিষ্কার রাখুন, মাস্ক পরুন
ঘ) ঠিক করে রান্না করে ডিম, মাংস খাওয়া
ভ্যাকসিন
২০০৭ সালে আমেরিকা একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। তবে এই মুহূর্তে আমেরিকায় বার্ড ফ্লু-র প্রকোপ না থাকায় তারা এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে না। তাই কোনও দেশের বাজারে মিলছে না এই ভ্যাকসিন।