For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

মাইকেল জ্যাকসন ভুগছিলেন এই কঠিন রোগে, আপনি আক্রান্ত নন তো? দেখুন এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে

|

যে কয়টি দুরারোগ্য অসুখের কবলে পড়ে মানবদেহের বেশিরভাগ তন্ত্র একসঙ্গে আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেই সকল অসুখের মধ্যে অন্যতম হল 'সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস' সংক্ষেপে 'SLE'। রোগের শ্রেণীবিন্যাস করে এই SLE-কে রিউম্যাটলজিক্যাল ডিজিজ বা বাত সংক্রান্ত অসুখের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটি এমন একটি জটিল রোগ, যা কখনোই সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠে না। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের লক্ষণ এবং জটিলতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

Systemic Lupus Erythematosus : Causes, Symptoms, Treatments And Prevention

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, SLE একটি সিস্টেমিক অটোইমিউন ডিজিজ। মানে, শরীরের ইমিউন সিস্টেম কোনও এক অজ্ঞাত কারণে নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে, অর্থাৎ শরীরকে রোগের থেকে রক্ষা করার পরিবর্তে শরীরের বিভিন্ন কোষ ও কলাকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে সেই সমস্ত অংশের কার্য ক্ষমতা কমে যায় এবং দুর্বল হয়ে জায়গাটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যে মানুষ যত বেশি দিন ধরে এই রোগে ভুগবেন, তার শরীরে এই রোগ সংক্রান্ত নানান জটিলতাও তত বেশি দেখা দেবে। ঘন ঘন বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়া, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হার্টের অসুখ, বুকে জল জমা, হঠাৎ করে পেটে প্রচন্ড ব্যথা, মস্তিষ্ক সংক্রান্ত জটিলতা ইত্যাদির কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। তবে এই রোগের কারণ ঠিক কী তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন : কোভিডের সংক্রমণের ফলে দেখা দিচ্ছে ফুসফুসের এই কঠিন রোগ! জানুন রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

উল্লেখ্য, পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাও চলেছিল তাঁর। তবে চলুন জেনে নিন এই দীর্ঘমেয়াদী SLE রোগটি আসলে কী?

সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস (SLE) কী?

সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস (SLE) কী?

এই SLE নামটির উৎপত্তি বিশ শতকের শুরুতে। ল্যাটিন ও ইংরেজি শব্দের সংমিশ্রণে তৈরি ‘সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস'। ‘সিস্টেমিক' শব্দের অর্থ শরীরের প্রায় সব তন্ত্র আক্রান্ত হওয়া, ‘লুপাস' শব্দের অর্থ (রূপক অর্থে) নেকড়ের আক্রমণে তৈরি ক্ষত এবং গ্রীক ভাষায় ‘ইরিথেমাটোসাস' শব্দের অর্থ চামড়া লাল হয়ে যাওয়া।

SLE একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বত:প্রতিরোধী রোগ, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাঁটু ও কনুইসহ ত্বক, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রক্তবাহী শিরা, ধমনি এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রকে আক্রান্ত করে। এই অসুখের ফলে শরীরে নানা ধরনের অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওষুধ দিয়ে এইসব অকেজো অ্যান্টিবডিকে আটকে না দিলে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

এই রোগটি আফ্রিকান, হিসপানিক, এশীয় ও আমেরিকান বংশদ্ভূত লোকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। লুপাস ফাউন্ডেশন অফ আমেরিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকায় কমপক্ষে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগকে সঙ্গে নিয়ে জীবনযাপন করছেন। তবে আমেরিকার তুলনায় আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩.২ জন এই অসুখে ভুগছেন। বিশ্বব্যাপী সমীক্ষায় জানা গেছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগের ঝুঁকি ৯ গুণ বেশি। মূলত এই রোগটি ১৫-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

এর কারণ কী?

এর কারণ কী?

এই রোগটি কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা রোগটি হওয়ার সাধারণ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন।

১) বংশগত কারণে, অর্থাৎ পূর্বপুরুষের কারুর থেকে থাকলে।

২) পরিবেশগত কারণ যেমন - সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং ভাইরাস

৩) অত্যাধিক শারীরিক বা মানসিক চাপ

৪) ট্রমা

৫) কিছু ওষুধ

৬) হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

রোগের লক্ষণ

রোগের লক্ষণ

১) দীর্ঘদিন ধরে হালকা জ্বর

২) চুল পড়ে যাওয়া

৩) ওজন ও খিদে কমে যাওয়া

৪) দুর্বলতা ও ক্লান্তি

৫) হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা

৬) শ্বাসকষ্ট

৭) নাকের উপর ও গালের দু'পাশে প্রজাপতির পাখার মতো দেখতে লাল ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ হওয়া, যাকে ইংরেজিতে ‘বাটারফ্লাই র‍্যাশ' বলা হয়।

৮) রোদে গেলে চামড়ায় অস্বস্তি এবং লাল ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ হওয়া।

৯) মুখের ভিতরে, জিহ্বায়, মাড়িতে বা ঠোঁটে ঘা হওয়া।

১০) কাশি হওয়া এবং জোরে শ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যাথা অনুভব করা।

১১) প্রস্রাবে জ্বালাভাব এবং রক্তের মতো লাল প্রস্রাব হওয়া।

১২) ঠান্ডা জায়গায় গেলে হাতের আঙ্গুল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।

রোগীর গুরুতর লক্ষণগুলি হল

রোগীর গুরুতর লক্ষণগুলি হল

১) কিডনির রোগ (Nephritis)

২) হৃদরোগ (Atherosclerosis)

৩) স্ট্রোক

৪) উদ্বেগ এবং হতাশা

৫) স্মৃতিশক্তি হ্রাস

৬) নিউমোনিয়া

৭) থাইরয়েডের সমস্যা

রোগ নির্ণয়

রোগ নির্ণয়

রোগের লক্ষণের উপর ভিত্তি করে কিছু শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, ব্লাড সেল কাউন্ট ইত্যাদির মাধ্যমেও নির্ণয় করা হয়।

জটিলতা

জটিলতা

মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় জটিলতা বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রিম্যাচিওর বেবি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় মা যদি এই রোগে ভুগে থাকেন তবে তাঁর সন্তানও এই অসুখ নিয়ে জন্মাতে পারে। প্রচন্ড মাত্রার SLE অনেকসময় স্থায়ী বন্ধ্যাত্বেরও কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী SLE থেকে অনেক সময় লিম্ফোমা(Lymphoma) জাতীয় ক্যান্সারও হতে পারে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা

এই রোগের এখনও পর্যন্ত সঠিক কোনও চিকিৎসা নেই। তবে রোগ নির্ণয় করার পর চিকিৎসকেরা রোগীর মানসিক অবস্থাকে দৃঢ় করে তোলেন এবং বিভিন্ন ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করানো হয়, যেমন - বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ইত্যাদি ঔষধও প্রয়োগ করা হয়।

প্রতিরোধের উপায়

প্রতিরোধের উপায়

১) সূর্যের রশ্মি থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

২) ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩) অ্যালকোহল থেকেও দূরে থাকতে হবে।

৪) হাড়কে শক্তিশালী করে তুলুন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

৫) ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার খান।

৬) গর্ভনিরোধক ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।

English summary

Systemic Lupus Erythematosus : Causes, Symptoms, Treatments And Prevention

Systemic lupus erythematosus is an autoimmune disorder or disease of the immune system that causes acute and chronic inflammation to various body parts such as kidney, brain, heart, lungs, blood cells.
X
Desktop Bottom Promotion