Just In
প্রেসার এবং সুগারের রোগীদের কি সত্যিই আলু খাওয়া উচিত নয়?
এই সবজিটিতে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা খুব রয়েছে। তাই আলু খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অথবা হার্টের রোগ হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না।
এই একটি সবজির বিরুদ্ধে কেউ না কেউ জেহাদ ঘোষণা করে চলেছে। রক্তাচাপ মাত্রা ছাড়িয়েছে? এক্ষুনি আলু বন্ধ করুন, না হলে পটল তুলবেন। কোলেস্টেরল হাই! তাহলে তো আলু বাদ, একেবারে বাদ! এইভাবে একদল স্বল্প জ্ঞানি নানা রোগের সঙ্গে আলুকে যোগ করে এই সবজিটিকে এক প্রকার অচ্ছুত বানানোর চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেন না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আলুর বিরুদ্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে কোনও নথি নেই। বরং একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে আলুতে উপস্থিত একাধিক উপাদান শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাহলে আলুর বিরুদ্ধে সব প্লেকার্ড হাতে পথে নেমেছে কেন? আসলে একটা ভুল ধরণার এর পিছনে দায়ি। অনেকই মনে করেন অলু খেলে ওজন বাড়ে, সেই সঙ্গে লেজুড় হয় আরও কিছু রোগও। আদতে কিন্তু এমন হওয়ার সম্ভাবনা বেজায় কম, যদি শুধু আলু খান তো। মানে, আলু ভেজে না খেলে শরীরে কম-বেশি প্রায় ১১০ ক্যালরি প্রবেশ করে। এই পরিমাণ ক্যালরি ঝরাতে একেবারেই বেশি সময় লাগে না। কিন্তু কেউ যদি আলু ভেজে অনিয়ন্ত্রিত হারে খাওয়া শুরু করেন অথবা আলুর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মাখন খাওয়া শুরু করে, তাহলে কিন্তু একেবারে অন্য ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশ কিছু রোগের উপদ্রবও বাড়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।
প্রসঙ্গত, আলুতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান, ভিটামিন এবং খনিজ নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে। সেই সঙ্গে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আলুর সঙ্গে প্রেসার বাড়া-কমার কোনও সম্পর্ক আছে বলে তো মনে হয় না। সেই সঙ্গে একথাও জেনে রাখা ভাল যে আলু সেদ্ধ খাওয়ার সঙ্গে আলুর মতো চেহারা হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই দয়া করে ডায়েটিং-এর নামে আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন না। এমনটা করলে কিন্তু আদতে আপনার শরীরেরই ক্ষতি হবে।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল কোলেস্টেরল রোগীরা কি আলু খেতে পারবেন? এই উত্তর অবশ্য়ই পাবেন। সেই সঙ্গে আলু সম্পর্কিত যত ধরনের ভুল ধরণা আছে, তা এই প্রবন্ধটি পড়লে যে ভেঙে যাবে, তা হলফ করে বলতে পারি।
আলু কোলেস্টেরল ফ্রি:
এই সবজিটিতে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা খুব রয়েছে। তাই আলু খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অথবা হার্টের রোগ হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। বরং একথাও বলা যেতে পারে যে যাদের হার্টের রোগ রয়েছে তারা ইচ্ছা হলে দিনে কয়েক টুকরো সেদ্ধ আলু খেতেই পারেন। তাতে ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না।
আলুতে আছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, কম রয়েছে সোডিয়াম:
চিকিৎসকেরা বলেন, নুন বা সোডিয়াম বেশি রয়েছে এমন খাবার খেলে ব্লাড প্রেসার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আলুতে যে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব কম থাকে, তাই এই সবজিটি খেলে যে ব্লাড প্রেসার একেবারেই বাড়ে না, তা বলাই বাহুল্য! শুধু তাই নয়, আলুতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে সব দিক থেকেই আলু প্রেসারের রোগীদের জন্য নিরাপদ। প্রসঙ্গত, কলাতে যে পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে তার থেকে অনেক বেশি থাকে আলুতে। তাই এই সবজিটিকে কোনও ভাবেই কাঠগড়ার দাঁড় করানো উচিত নয়। বরং বেশি করে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ফাইবারের আঁতুড় ঘর:
মাঝারি মাপের একটা আলুতে প্রায় ২ গ্রামের কাছকাছি ফাইবার থাকে, যা সারা দিনের মোট ফাইবারের চাহিদার প্রায় ৮ শতাংশ পূরণ করে থাকে। প্রসঙ্গত, ডায়াটারি ফাইবার একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো শরীরে যাতে কোনও সময় ফাইবারের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আলু আপনাকে কিন্তু ব্যাপক ভাবে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করে:
নিয়মিত আলু খেলে শরীরে এই বিশেষ উপাদানটি ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে আর্টারিতে ময়লা জমার সুযোগ পায় না। ফলে হটাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই কারণেই তো আলুকে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় বেশ উপরের দিকে জায়গা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
ভিটামিন বি৬ চাহিদা মেটায়:
হিমোগ্লোবিন সিন্থেসিসের জন্য ভিটামিন বি৬-এর প্রয়োজন পরে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনটির চাহিদা মেটাতে আলুর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।