Just In
করোনার মাঝেই কেরলে শিগেলা সংক্রমণ, জানুন এর লক্ষণ ও চিকিৎসা
করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক কমার বদলে দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের যে নয়া স্ট্রেন ধরা পড়েছে তার সংক্রমণ নিয়ে প্রবল চিন্তায় গোটা বিশ্ব। নয়া স্ট্রেনকে আটকাতে প্রত্যেকটি দেশ আগাম সতর্কতা নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ভারতও নয়া গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এরই মাঝে কেরলে দেখা দিল নতুন এক সংক্রমণ। যার নাম শিগেলা। উত্তর কেরলে মূলত এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের জনের শরীরে শিগেলার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরে রয়েছে আরও কয়েকজন। এই রোগে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে কেরালার এক ১১ বছরের বাচ্চার।
শিগেলা কী?
এটি একটি ইনটেস্টিনাল ইনফেকশন, যা শিগেলা ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়। ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা দেয় বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। দূষিত জল পান করলে, বাসি খাবার খেলে বা সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহার করা শৌচালয় ব্যবহার করার পরে শিগেলা আক্রান্ত হতে পারেন একজন। ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর কোলনের উপরের আস্তরণের ওপর আক্রমণ করে যার ফলে কোষগুলিতে প্রদাহ হয় এবং পরে কোষগুলি ধ্বংস হয়ে যায়। সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলেও অসুস্থ করে দিতে পারে একজনকে।
২০১৫ গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ডায়েরিয়াজনিত রোগগুলি বিশ্বব্যাপী ১.৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। শুধু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মানুষ শিগেলা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হন।
শিগেলার উপসর্গ
শিগেলার মূল উপসর্গ ডায়রিয়া। মলের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। সেইসঙ্গে পেটের যন্ত্রণা, জ্বর, গা বমি বমি ভাব হতে পারে। কোনও ব্যক্তি শিগেলা সংক্রামিত হলে দু'দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেবে। সাত দিন পর্যন্ত উপসর্গ থাকতে পারে। তবে করোনার মতো উপসর্গহীনও হতে পারেন শিগেলা আক্রান্ত ব্যক্তি। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি বুঝতেও পারবেন না যে তিনি শিগেলা আক্রান্ত হয়েছেন।
কীভাবে ছড়ায়
একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া। যেহেতু শিশুদের মধ্যে শিগেলার প্রকোপ বেশি দেখা যায় সেক্ষেত্রে বাচ্চার দিক থেকে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুর ডায়াপার বদলানোর পর যদি ভালো করে হাত না ধুয়ে খাবার খান, তাহলে ব্যাকটেরিয়া ওই ব্যক্তির শরীরে ঢুকে পড়বে। খাবার এবং জল থেকে সবথেকে বেশি ছড়ায় শিগেলা। দূষিত জল পান করলে, বাসি খাবার খেলে, এমনকি সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত শৌচালয় ব্যবহার করার পরে একজন ব্যক্তি শিগেলোসিসে আক্রান্ত হতে পারে।
কতটা গুরুতর হতে পারে শিগেলা
করোনা নিয়ে আতঙ্কে দেশ। মৃত্যু হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। তার মাঝে শিগেলার সংক্রমণের খবর ছড়াতেই মানুষের ভয়, এই ব্যাকটেরিয়া কতজনের প্রাণ কাড়বে? তবে চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন, সেভাবে গুরুতর আকার নিচ্ছে না শিগেলা। ডায়রিয়া ছাড়া সেভাবে আক্রান্তের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। যদি ডায়রিয়া এক সপ্তাহের বেশি হয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা না করালে খিঁচুনি, রেকটাল প্রোল্যাপস এবং রিঅ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিসের মতো জটিলতা, এমনকী মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে আক্রান্তের।
কখনও বিষাদ, কখনও আনন্দ? এই ভয়ানক রোগে আক্রান্ত নন তো!
শিগেলার কোনও ভ্যাকসিন আছে?
শিগেলা চিকিৎসায় এখনও কোনও ভ্যাকসিন নেই। তবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং গ্লোবাল ভ্যাকসিন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন উদ্যোগী হয়েছে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে। শিগেলোসিস এবং অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগের ভ্যাকসিনের অগ্রগতি ও বাণিজ্যিকীকরণের জন্য এই দুই সংস্থা একটি মউ স্বাক্ষর করেছে। আপাতত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে শিগেলা আক্রান্তকে।
সতর্কতা
করোনার মতই শিগেলার ক্ষেত্রেও সবথেকে বেশি দরকার সতর্ক হওয়া। বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে শিগেলা সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিজনদের দূরে রাখতে পারেন আপনি।
১) বিশুদ্ধ জল পান করুন। জল ফুটিয়ে পান করলে খুব ভাল।
২) বারবার হাত ধুতে হবে। প্রতিবার ভালো সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোবেন।
৩) বাইরের খাবার, বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে এমন খাবার থেকে দূরে থাকুন। যতটা পারবেন তাজা খাবার খান।