Just In
ফুসফুস ক্যান্সার-এর তৃতীয় পর্যায়ে আক্রান্ত মুন্নাভাই, জেনে নিন এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত
রিল থেকে রিয়েল লাইফ, সবেতেই বেশ সুন্দর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ৬০ এর গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য পাও দিয়েছেন ৬১ বছর বয়সে। কিন্তু এরই মাঝে বিপদ ঘনিয়ে এল তাঁর জীবনে। হঠাৎই তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে দু'দিন আগে ভর্তি হন বলিউডের মুন্নাভাই। মারাত্মক হারে ওঠানামা করছিল অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা। করোনা সন্দেহে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা করা হয় অভিনেতার। তবে সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তার পর RT-PCR টেস্টের জন্য অভিনেতার সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টও নেগেটিভ আসায় হাসপাতালের তরফ থেকে আরও কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়। অবশেষে জানা যায় ফুসফুসের ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন সঞ্জয় দত্ত। তাঁর লাং ক্যান্সার তৃতীয় পর্যায় বা থার্ড স্টেজে পৌঁছে গিয়েছে।
তবে ক্যান্সার মানেই যে জীবন থমকে যাওয়া, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তাই তিনি নিজেই অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে টুইট করে জানান "প্রিয় বন্ধুরা, কিছু চিকিৎসার কারণে কাজ থেকে আপাতত বিরতি নিচ্ছি। পরিবার, বন্ধুরা সঙ্গে আছে। চিন্তার কিছু নেই। আমি সবাইকে বলব, অহেতুক চিন্তা করবেন না৷ কোনও স্পেকুলেশনকেও গুরুত্ব দেবেন না৷ শীঘ্রই দেখা হবে !"
কিন্তু কী কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ল তাঁর? কীভাবেই বা হলো এই ক্যান্সার? তা জানার জন্য অনুরাগীরা উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। তবে চলুন জেনে নিন লাং ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত।
লাং ক্যানসার হওয়ার কারণ কী?
১) ধূমপান, এটি হলো ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ।
২) ধূমপান না করেও, ধূমপানকারী ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩) পরিবারে যদি কারুর ক্যান্সার থেকে থাকে।
৪) অত্যাধিক পরিবেশ দূষণ, ক্ষতিকর ধোঁওয়ার আশেপাশে থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫) আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টোস, ক্রোমিয়াম বা এই জাতীয় মৌলগুলির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
রোগের লক্ষণ
সবার ক্ষেত্রে সমান ধরণের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। ফুসফুসে টিউমারের আকৃতির উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলি।
১) অত্যাধিক কাশি। কারও কারও আবার কাশির সঙ্গে রক্ত পড়ে।
২) শ্বাসকষ্ট
৩) বুকে ব্যথা
৪) গলার স্বরের পরিবর্তন
৫) ওজন কমে যাওয়া
৬) ঘন ঘন মাথাব্যথা
৭) শরীরের বিভিন্ন হাড় ও গাঁটে ব্যথা
৮) অবসাদ
৯) স্মৃতিশক্তি লোপ এবং ভারসাম্যহীন চলন ভঙ্গি
১০) রক্তপাত এবং রক্তপিণ্ডের সৃষ্টি
লাং ক্যান্সার এর প্রকার
১) স্মল সেল লাং ক্যান্সার
যারা প্রচুর পরিমাণে ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার দেখা দেয়।
২) নন স্মল সেল লাং ক্যান্সার
নন স্মল সেল লাং ক্যান্সারের অধীনে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার রয়েছে। এতে মূলত স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, অ্যাডিনোকার্সিনোমা ও লার্জ সেল কার্সিনোমা দেখা দেয়।
পর্যায়
স্টেজ-০, স্টেজ-১, স্টেজ-২, স্টেজ-৩ ও স্টেজ-৪ এই পাঁচ ধরনের পর্যায়ে বিভক্ত করা হয় ফুসফুসের ক্যান্সারকে। তবে ফুসফুসে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে খুব কমই ধরা পড়ে। মূলত স্টেজ-৩ অবস্থায় থাকাকালীন এটি বেশি ধরা পড়ে।
'দিল বেচারা'-র ম্যানি আক্রান্ত ছিলেন অস্টিওসারকোমাতে, জানুন এই রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে
রোগ নির্ণয়
১) বায়োপসি।
২) রক্ত পরীক্ষা এবং কফ পরীক্ষার মাধ্যমে।
৩) এক্সরে।
প্রাথমিক ক্ষেত্রে, এইসব পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে লাং ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
লাং ক্যান্সার চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে রোগের পর্যায় নির্ণয় করে তবেই চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি রোগীর শারীরিক অবস্থার কথাও বিবেচনা করেন চিকিৎসকেরা।
১) প্রথম পর্যায় হিসেবে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে থাকেন। যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
২) অস্ত্রোপচারের পর কেমোথেরাপির একটা কোর্স দেওয়া হতে পারে।
৩) অস্ত্রপ্রচার না হলে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
৪) যদি ক্যান্সার অত্যন্ত বেশি পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ে অর্থাৎ স্টেজ-৩ তে ধরা পড়ে তবে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
প্রতিরোধ
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছরে ভারতে যত সংখ্যক মানুষের ক্যান্সার ধরা পড়ে, তার প্রায় ৬.৯ শতাংশই ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি বলে জানা যায়। তাই এর থেকে মুক্তি পেতে আমাদের প্রথমেই ছাড়তে হবে ধূমপান। এছাড়াও পলিউশন, ধোঁওয়া ইত্যাদি থেকে আমাদের দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।