For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts

ছড়াচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়া পরজীবী, আক্রান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

|

ম্যালেরিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী কিছু পরজীবী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই পরজীবীরা বিপজ্জনকভাবে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে। দ্য ল্যানসেট ইনফেক্টিয়াস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যালেরিয়া পরজীবী ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ম্যালেরিয়ার জন্য প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হচ্ছে।

"প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম" ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় সবচেয়ে নতুন এবং শক্তিশালী ওষুধের মিশ্রণ বলে অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। কিছু গবেষকদের মতে, এই ওষুধটি তার গুণ হারিয়ে ফেলছে।

malaria


জনৈক গবেষক রবার্তো আমাতো জানিয়েছেন, ওষুধ প্রতিরোধী পরজীবী ভয়ানক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় ম্যালেরিয়া পরজীবীকে সরিয়ে এটা তার স্থান দখল করে নিচ্ছে। ভিয়েতনাম, লাওস ও উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

ডিএইচএ-পিপিকিউ নামে পরিচিত ওষুধের একটি মিশ্রণ এই পরজীবীর বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল। কিন্তু, গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম ভিয়েতনামে এই ওষুধের ব্যর্থতার হার ৫৩ শতাংশ। উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে এর ব্যর্থতার হার সবচেয়ে বেশি। সেখানে এর ব্যর্থতার হার ৮৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

ম্যালেরিয়া কী?

ম্যালেরিয়া একপ্রকার মশা বাহিত সংক্রমিত রোগ। এটি বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এটি এক ধরনের পরাশ্রয়ী রোগ। এর মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম নামক এক ধরনের অণুজীব। ম্যালেরিয়া শব্দটি একটি ইতালিয় শব্দ।

মানুষের দেহে পাঁচ ধরনের প্লাজমোডিয়াম প্রেরণ এবং সংক্রমণ ঘটতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ওভাল ও প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরি নামক পরজীবীদের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। সাধারণত, মশা কামড়ানোর ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যা ডাক্তারি ভাষায় 'ইনকিউবেশন পিরিয়ড' নামে পরিচিত।

কীভাবে হয় ?

সাধারণত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা কামড়ালে মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। অ্যানোফিলিস মশা কোনও সুস্থ ব্যাক্তিকে কামড়ালে লালার মধ্য দিয়ে সেই জীবাণু শরীরের সংবহন তন্ত্রে চলে যায়। তারপর তা রক্তের মাধ্যমে যকৃতে গিয়ে বাসা বাঁধে, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও প্রজনন করে।

ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ-

ম্যালেরিয়া রোগের সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর, মাথা ব্যাথা। যা অনেক সময় রোগীকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যায়। এতে কয়েকঘণ্টা পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এছাড়াও বমি বমি ভাব, অনিদ্রা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

রোগীর দেহে জীবাণুর সংখ্যা মাত্রার বাইরে চলে গেলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ভাঙতে শুরু করে। ফলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। অনেকসময় রোগীর যকৃত বড় হয়ে যায়। এছাড়া, মস্তিষ্ক ম্যালেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া মায়ের, ভ্রুণের এবং শিশুর ব্যাপকভাবে ক্ষতি করে। এই সকল মহিলারা ম্যালেরিয়া সংক্রমণ দূর করার ক্ষেত্রে কমজোর হয়ে পড়ে। যার ফলে গর্ভস্থ ভ্রুণ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোথায় কোথায় ম্যালেরিয়ার প্রভাব বেশি দেখা যায়?

ক্রান্তীয় অঞ্চল, ‌উপ‌-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায় এই রোগ। কারণ বৃষ্টিপাত, উষ্ণ তাপমাত্রা, এবং জমা জল হল মশার ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ বাসস্থান। আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল এই রোগের আওতায় পড়ে। বিশেষ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ধরনের রোগের প্রভাব এতটাই বেড়েছে, যেটা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে।

২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আনুমানিক ২১৯ মিলিয়ন ম্যালেরিয়ার ঘটনার স্থলসমূহ নথিভুক্ত করেছে। সেই বছরই, ৬,৬০,০০০ থেকে ১.২ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে মারা যায়। যাদের অধিকাংশই ছিল আফ্রিকার শিশুরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে, প্রতি বছর ২০০ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে ৪ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

৯৯টি দেশের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের কারণে ১,০৬,৮২০ জনের মৃত্যু হয়। ম্যালেরিয়া সাধারণত দারিদ্র্যের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত এবং এছাড়াও এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি প্রধান বাধা হয়ে উঠতে পারে। প্রত্যেক বছরই, প্রায় ৫১.৫ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় দশ থেকে ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান।

কর্নাটকেও ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৪০৪ জন। তাদের মধ্যে, এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন তিন জন। জানা গেছে, পরিস্থিতি সামলাতে বিশেষ চিকিৎসক দল গঠন করেছে প্রশাসন।

গবেষকদের মতে, এই ম্যালেরিয়া পরজীবী আফ্রিকায় ছড়ালে মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। এখন এটাই দেখার, তারা ভবিষ্যতে কীভাবে এর মোকাবিলা করেন এবং এই ওষুধ প্রতিরোধী পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে পুরো পৃথিবীকে বাঁচাতে পারেন কী না।

English summary

ছড়াচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়া পরজীবী, আক্রান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

A study published in The Lancet Infectious Journal reveals that The parasites, responsible for causing Malaria, are becoming more and more resistant to the most common antimalarial drugs. This worrying trend has compelled the experts to raise an alarm, as more than 200 million people are diagnosed with malaria each year, out of which 400,000 people die from the disease.
X
Desktop Bottom Promotion