Just In
Don't Miss
কিউই ফল : জেনে নিন এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, ঝুঁকি ও খাওয়ার পদ্ধতি
কিউই, নামটি হয়তো শুনে থাকবেন। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। স্বাদের মতোই এর গুনাগুণও অঢেল। কয়েক দশক আগে এই ফলের প্রচলন ভারতবর্ষে সে ভাবে দেখা যায়নি। তবে, বর্তমানে ভারতের কিছু জায়গায় ফলটি পাওয়া যায় এবং এর গুনাগুণ সম্পর্কে প্রায় অনেকেই ওয়াকিবহাল।
এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই ফল জনপ্রিয়তা পেলেও ভারতের বহু জায়গায় এখনও দেখা যায় না এই ফল। খাস কলকাতাতেও প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। তবে জিটিএ সূত্রে খবর, দার্জিলিং, সিকিম সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কিউই চাষের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। সাফল্যও পাওয়া গেছে সিকিম ও রঞ্জু ভ্যালিতে। স্বাদে ভরপুর এই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতাও কিন্তু প্রচুর। একটি ফল খেলেই পাবেন হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিউই-এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
উৎপত্তি ও কোন দেশে বেশি প্রচলন
কিউই মূলত চিন দেশের ফল, যেটি দেখতে অনেকটা লেবুর মত। ফলের বাইরের রঙ গোল্ডেন ব্রাউন এবং ভেতরে সবুজ রঙের হয়। চিন দেশে গুজবেরি ও ইয়াং টাও নামেও পরিচিত এই ফলটি। তবে বর্তমানে ‘কিউই' হিসেবেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। কিউই একটি অত্যন্ত সুস্বাদু বেরি, যা চীন থেকে নিউজিল্যান্ডে ২০ শতকের গোড়ার দিকে আনা হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে, এটি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল হিসেবেও পরিচিত। ইউরোপ, আমেরিকা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং গ্রিসেও বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের কিছু কিছু জায়গায় মাঝেমাঝে এই ফলের প্রচলন দেখা যায়।
কিউই ফলের পুষ্টিগত মান
প্রতি ১০০ গ্রাম কিউই ফলের মধ্যে ৬১ কিলো ক্যালরি শক্তি থাকে এবং এতে রয়েছে
- ১.৩৫ গ্রাম প্রোটিন
- ০.৬৮ গ্রাম ফ্যাট
- ১৪.৮৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ২.৭ গ্রাম ফাইবার
- ৮.৭৮ গ্রাম চিনি
- ৪১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
- ০.২৪ মিলিগ্রাম আয়রন
- ৩১১ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
- ৯৩.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
- ৬৮ আই ইউ ভিটামিন-এ
- ৩৭.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-কে
ঘি নাকি মাখন : স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি উপকারি?
এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
১) হার্টকে সুস্থ রাখে
কিউই ফল ভিটামিন-সি এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন এক থেকে দুটি করে কিউই ফল খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায় যা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। এটি খেলে রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ কমানো যায়, ফলে ব্লকেজ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়া, কিউইতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হার্ট ভাল রাখতে সাহায্য করে।
২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে
কিউই ফলে থাকা ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কানাডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিওলজি অ্যান্ড ফার্মাকোলজিতে প্রকাশিত হওয়া একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কিউই ফলগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার করে এবং ঠান্ডা বা ফ্লু-এর মতো অসুস্থতার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
৩) হজমে সহায়তা করে
কিউই ফলে অ্যাক্টিনিডিন(Actinidin) নামক এনজাইম থাকে যা, প্রোটিন-দ্রবীভূত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। কিউইতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কিউই দ্বিগুণ পরিমাণ হজমশক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং হজমের সমস্যাগুলিকে ঠিক করে তোলে।
৪) চোখ ভাল রাখে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
কিউই ফল ফাইটোকেমিক্যালের একটি ভাল উৎস, যা ম্যাকুলার অবক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিউই ফলের মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন-এ এবং ফাইটোকেমিক্যাল চোখের ছানি এবং বয়সজনিত কারণে চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫) হাড় ও দাঁত ভাল রাখে
কিউই-তে থাকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, বি-৬, বি-১২, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লোহা এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে ঠিক রাখে এবং হাড় ও দাঁতকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
গরম জলে আদা, রসুন, এবং মধু দিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
৬) রক্তচাপ কমায়
কিউই রক্তচাপ পরিচালনায় একটি দুর্দান্ত ফল। ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতিদিন ৩টি কিউই ফল খেলে এতে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থগুলি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। নিম্ন রক্তচাপ স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিকে হ্রাস করে।
৭) হাঁপানি রোগের চিকিৎসা করতে
একটি গবেষণা অনুযায়ী, হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিউই ফল খাওয়া উচিত। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিউই-তে থাকা ভিটামিন-সি হাঁপানি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা প্রচুর রয়েছে।
৮) অনিদ্রা দূর করতে
এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কিউই ফলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অনিদ্রার মতো ঘুমের ব্যাধিগুলির জন্য খুবই উপকারি। তাই, ঘুমের সমস্যা দূর করতে রোজ খান এই ফলটি।
৯) কিডনির পাথর থেকে মুক্তি পেতে
কিউই ফলগুলি পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস যা, কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
১০) স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে
কিউই-তে থাকা ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বককে রোদ, দূষণ এবং ধোঁয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। কিউই ফল বার্ধক্য বিলম্ব করে এবং ত্বকের সামগ্রিক গঠনকে উন্নত করে।
অ্যাভোকাডো বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আপনি জানেন না
১১) ডায়াবেটিস রোধ করতে
কিউই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল। কারণ, এটি লো গ্লাইসেমিক হওয়ার কারণে সুগার কন্ট্রোল করে। কিউই-তে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার ফলে এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে যা, টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই, রোজ ২-৩ টি করে কিউই খান।
স্বাস্থ্যকর ঝুঁকি
কিউই একটি উপকারি ফল হলেও কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। এর লক্ষণগুলি হল- ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া, চুলকানি, মুখ, ঠোঁট এবং জিহ্বা ফুলে যাওয়া এবং চুলকানি হওয়া। অনেকের ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার পর বমি বমি ভাবও দেখা দেয়।
কীভাবে খাবেন কিউই ফল
১) আপনি কিউই ফলের সঙ্গে আম, আনারস এবং স্ট্রবেরি মিশিয়ে একটি ফলের ককটেল তৈরি করতে পারেন।
২) কিউই স্লাইসগুলি কোনও কিছু মিশ্রণ ছাড়াই গ্রহণ করতে পারেন।
৩) এই ফলের সালাদ তৈরি করতে পারেন এবং মিষ্টির স্বাদ পেতে এতে মধু মিশ্রিত করতে পারেন।
আয়রনের এই স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে জানেন? রইল আয়রন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য
৪) তরমুজ এবং কিউই রস পান করতে পারেন। এছাড়াও তাজা ফল এবং ভ্যানিলা আইসক্রিমের সঙ্গে গ্রিলড কিউই খেতে পারেন।