Just In
ইমিউনিটি বাড়াতে আয়ুষ মন্ত্রকের নির্দেশিকা
করোনা প্রতিরোধের যুদ্ধে সামিল গোটা ভারতবর্ষ। ১৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় নাগরিকদের কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, পাশাপাশি নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে তিনি সকল ভারতবাসীকে আয়ুষ মন্ত্রকের দেওয়া নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলেন।
ভারতবর্ষে এলোপ্যাথি বাদ দিয়ে যে সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তাদের শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নতি সাধনের জন্য এই মন্ত্রণালয় তৈরী হয়েছে। আয়ুর্বেদ, যোগ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথির আদ্যক্ষর নিয়ে AYUSH শব্দটি গঠিত হয়েছে, যা ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত।
এই আয়ুষ মন্ত্রক করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দেহের শক্তিকে উন্নত করতে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে একটি নির্দেশিকা নির্ধারণ করেছে। নির্দেশগুলি মূলত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে প্রাকৃতিক ঔষধ এবং গাছপালা ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতেও সাহায্য করবে। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক আয়ুষ মন্ত্রকের দেওয়া গাইডলাইনগুলি।
১) রোজ গরম জল পান করুন
প্রতিদিন তিন থেকে চারবার গরম জল পান করুন। গরম জল আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) অপসারণ থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে।
করোনা ভাইরাস : কোয়ারান্টিনের সময় যে খাবারগুলি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে
অত্যাধিক তাপমাত্রা যুক্ত গরম জল পান করবেন না, জিহ্বা এবং মুখ পুড়ে যেতে পারে। নিজের সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী গরম জল পান করুন।
২) যোগব্যায়াম করুন
নিয়মিত যোগ ব্যায়াম আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে অন্যতম এবং সহজ একটি উপায়। The Journal Of Behavioural Medicine-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, যোগব্যায়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শারীরিক ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। তাই কমপক্ষে ৩০ মিনিট নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং ধ্যান করুন।
৩) হলুদ, জিরা, ধনিয়া এবং রসুনের ব্যবহার
রোজ দিনের তৈরি করা খাবারে হলুদ, জিরা, ধনে এবং রসুনের মত মশলা ব্যবহার করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে এগুলিকে আপনার খাবারে যুক্ত করতে ভুলবেন না।
হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
জিরাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জিরা মিশ্রিত জল পানও করতে পারেন।
ধনিয়া-তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
রসুনে এমন এক যৌগিক উপাদান রয়েছে যা জীবাণু গুলির সঙ্গে লড়াই করতে খুবই কার্যকর।
৪) ঘি, তিল বা নারকেল তেলের ব্যবহার
নাসারন্ধ্রের ভেতরে দু'পাশে ঘি এর পাতলা প্রলেপ দিলে বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত পদার্থ নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় দেহের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। এই প্রক্রিয়াটিকে নাস্য কর্ম বলা হয়, যা অনুনাসিক পথগুলিকে পরিষ্কার রাখে।
তিল তেল বা নারিকেল তেল গরম করে তাতে তুলোর বল বা কান পরিষ্কার করার জিনিস ডুবিয়ে নাকের ভেতরে দুপাশে লাগান। এতে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার থাকে। এটি দিনে সর্বোচ্চ তিনবার করে করতে পারেন।
৫) হলুদের দুধ পান করুন
হলুদের সঙ্গে হালকা গরম দুধ মিশ্রিত করে তা পান করুন। এটি হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে, শারীরিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, কাশি এবং সর্দি কাটাতে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। উপকারিতার উপর ভিত্তি করে হলুদের দুধ-কে সোনার দুধও বলা হয়।
পরিমাণ মতো দুধ নিয়ে তাতে ১ চা-চামচ হলুদ, ১ চা চামচ মধু এবং ১ থেকে ২ চামচ আদা ফোটানো জল মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি পান করুন।
৭) ভেষজ চা পান করুন
অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করতে তুলসী, দারুচিনি, গোলমরিচ এবং শুকনো আদার মিশ্রণটি ফুটিয়ে পান করতে পারেন। ভিটামিন- সি'র প্রয়োজনীয়তাকে পূরণ করতে চাইলে পানীয়ের সঙ্গে লেবুর রস যুক্ত করতে পারেন। এই পানীয়টি দিনে দু'বার পান করুন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শারীরিক শক্তিরও বৃদ্ধি ঘটায়।
৮) মাউথ ওয়াশ
১ চা-চামচ তিলের তেল বা নারিকেল তেল নিন। এটিকে মুখের ভেতরে দুই থেকে তিন মিনিট রাখুন এবং কুলকুচি করুন। তারপর গরম জল দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে দু'বার পুনরাবৃত্তি করুন। এটি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অথবা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে করতে পারেন। এটি মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে এবং দুর্গন্ধ হ্রাস করতে সহায়তা করে।
৯) শুকনো কাশি ও গলা ব্যথা
কোভিড -১৯ সংক্রমণ শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। তাই আয়ুষ মন্ত্রক গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কিছু আয়ুর্বেদিক প্রতিকারের পরামর্শ দিয়েছে। পুদিনা পাতা জলের সঙ্গে ফুটিয়ে তার ভাপ নিলে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কাশি থেকে মুক্তি পেতে লবঙ্গের গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার গ্রহণ করুন।
১০) চবনপ্রাশ
প্রতিদিন এক টেবিল চামচ করে চবনপ্রাশ খান। এটি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কাশি বা সর্দি থেকে মুক্তি দেয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সুগার ফ্রি চবনপ্রাশ খান।
এই সকল নির্দেশিকাগুলি সাধারণ কাশি, সর্দি এবং শারীরিক অসুস্থতা নিরাময়ের জন্য। কিন্তু মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কোভিড -১৯ পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।