Just In
ওয়ার্ক ফ্রম হোমে বাড়ছে ঘাড় ও কোমরের ব্যাথা, রইল এর থেকে মুক্তির উপায়
করোনার কবলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মানব জীবন। এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। ফলে রোজদিনের নির্ধারিত রুটিনে এসেছে হাজারও পরিবর্তন। নেই, অফিস যাওয়ার তাড়া, কমেছে যাতায়াতের ধকল। করোনার ফলে চাকুরিজীবীরা এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমে ব্যস্ত।
অনেকেই ভেবেছিলেন ঘরে বসে কাজ করাটা বেশ আরামের। কিন্তু শুয়ে-বসে আরামের ওয়াক ফ্রম হমে দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা। প্রথম কয়েক দিন বাড়ি থেকে কাজ করাটা বেশ ভালো লাগলেও পরে একঘেয়ে, অসহ্য ও বিরক্তিকর লাগতে শুরু করেছে। ৮ ঘণ্টার কাজের সময় কখনও বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। ফলে মানসিক চাপের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে শারীরিক সমস্যা অর্থাৎ ঘাড় ও কোমরের ব্যথা। আবার কখনও কখনও সারা শরীরেও ব্যথা হচ্ছে। দিনের পর দিন বাড়িতে থেকে কাজ করার ফলে এই ধরনের কষ্ট কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে দিন দিন।
কিন্তু কেন হচ্ছে এই ধরনের সমস্যা, এর উত্তর হয়তো আপনিও খুঁজে পাচ্ছেন না। চলুন তবে জেনে নিন এটি হওয়ার কারণ এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়।
আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস লকডাউন : ওয়ার্ক ফ্রম হোমে কি স্ট্রেস বাড়ছে? দেখে নিন স্ট্রেস কমানোর উপায়
ঘাড় ও কোমরের ব্যথা হওয়ার কারণ?
অফিস গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আমাদের কাজ করতে হতো। সময় মাফিক বেরিয়ে বাস, ট্রেনে, ট্রামে চেপে অফিস পৌঁছানো। অফিসে কাজের ফাঁকে বন্ধুদের ডেস্ক এ বারবার যাওয়া, আড্ডা, লাঞ্চ কিংবা টিফিন খাওয়ার জন্য বাইরে বেরোনো, ইত্যাদি। এসবের ফলে সারা শরীর সচল থাকতো। কিন্তু বাড়িতে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে সচল থাকছে না শরীর, কমে যাচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম। পরিশ্রম না হওয়ার জন্য মাংসপেশী সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এক জায়গায় একই রকমভাবে অধিক সময় ধরে আরাম করে শুয়ে বসে কাজ করার ফলে মাংসপেশী বা সন্ধির ভঙ্গি সঠিক থাকছে না, ফলে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। বিশেষ করে কোমর এবং ঘাড়ে। পাশাপাশি চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে এভাবে অফিসের কাজ করার ফলে গায়ে লাগছে না সূর্যের রশ্মি। ফলে দেখা দিচ্ছে ভিটামিন ডি এর অভাব। যে কারণে ব্যথা আরও বেড়ে চলেছে।
ব্যথা থেকে প্রাথমিক উপায়ে মুক্তি পাওয়ার উপায়
১) শুয়ে বসে আরাম করে কাজ করা বন্ধ করুন।
২) অফিসে যেভাবে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করতেন, একইভাবে বাড়িতেও কাজ করুন।
৩) চেয়ারে বসে কাজ করার সময় কোমরের কাছে একটি কুশন দিয়ে বসুন।
৪) বাড়ির সোফা বা খাটে বসে কাজ করার সময় ঘাড় এবং কোমর সোজা রেখে কাজ করুন।
৫) চেয়ার এবং টেবিলের উচ্চতা এক কিংবা চেয়ারের তুলনায় টেবিলের উচ্চতা নিচু থাকলে তাতে বসে কাজ করবেন না। চেয়ার এর তুলনায় টেবিলের উচ্চতা বেশি রাখুন যাতে কোমর এবং ঘাড় সোজা রেখে কাজ করতে পারেন।
৬) কাজের মাঝে ফাঁকা সময়টিতে একটু হাঁটাচলা করুন এবং বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন। এই সময় ফোন কিংবা টিভি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
৭) বসে কাজ করার পরিবর্তে, সময় ভাগ করে কিছু সময় উঁচু টেবিলে ল্যাপটপ রেখে দাঁড়িয়ে কাজ করুন।
৮) টানা কাজ না করে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা অন্তর বিশ্রাম নিন এবং বাড়ির ব্যালকনি বা ছাদে গিয়ে হাঁটাচলা করুন।
৯) সকালে রোদের তাপ গায়ে লাগান।
১০) সিগারেট ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
আরও পড়ুন : কোভিড-১৯ : কোয়ারান্টিন কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে?
বাড়িতে থাকার ফলে সময় মাফিক খাওয়া-দাওয়া ও শারীরিক এক্সারসাইজের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যার ফলে দেখা দিচ্ছে এই ধরনের সমস্যা। তাই ব্যথা এড়াতে উপরোক্ত প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে চলার পাশাপাশি খাবার ও ব্যায়ামের দিকেও নজর দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার উপায়
১) শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। এটি শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই সহায়ক।
২) চা, কফি এবং কোলড্রিংস খাওয়া বন্ধ করুন।
৩) সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করুন এবং ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
৪) রোজকার খাবার তালিকায় কলা, ডিম, দুধ, মাছ, টক দই রাখার চেষ্টা করুন।
৫) করোনার আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরের সামনের রাস্তায় অথবা ছাদে দিনে দু'বার করে রোজ ৩০ মিনিট করে হাঁটা চলা করুন।
আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস লকডাউন : নিজেকে ফিট রাখতে যোগাসনে মন দিন
৬) সকালে এবং সন্ধ্যায় কোমরের ব্যথা থেকে উপশম পেতে কিছু যোগ ব্যায়াম করুন।
৭) কোমরের সঙ্গে ঘাড়কে সচল রাখতে এবং ঘাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ঘাড়ের কিছু এক্সারসাইজ করুন।
৮) সঠিক সময়ে ঘুমোতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। রাত জাগা বন্ধ করুন।