Just In
বছরের এই সময়ে সপ্তাহে কম-বেশি ২-৩ দিন রুটি এবং বেগুন পোড়া খাওয়া উচিত কেন জানেন?
শীতের মরসুমে রাতের খাবারে রুটি এবং বেগুন পোড়ার থেকে ভাল কম্বিনেশন আর কিছু হতে পারে না। কারণ স্বাদে তো বটেই, সেই সঙ্গে ওয়েদার চেঞ্জের সময় শরীরকে চাঙ্গা রাখতেও এই দুটি খাবারের কোনও বিকল্প হয় না।
বেগুন পুড়িয়ে তাতে লঙ্কা কুঁচি, অল্প নুন এবং সব শেষে ধনে পাতা যোগ করে গরম গরম সার্ভ করুন। সঙ্গে থাকা চাই ফুলকো রুটি। উফফ তাহলেই কেল্লা ফতে! আসলে হলকা শীতের মরসুমে রাতের খাবারে রুটি এবং বেগুন পোড়ার থেকে ভাল কম্বিনেশন আর কিছু হতে পারে না। কারণ স্বাদে তো বটেই, সেই সঙ্গে ওয়েদার চেঞ্জের সময় শরীরকে চাঙ্গা রাখতেও এই দুটি খাবারের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
বলেন কি মশাই! রুটি আর বেগুন পোড়া খেলে শরীর সুস্থ থাকবে? অবশ্যই!!! একাধিক গবেষণা অনুসারে বেগুনে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে যেমন শরীরকে ভিতর এবং বাইরে থেকে চাঙ্গা করে তোলে, তেমনি অন্যদিকে রুটির অন্দরে থাকা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম, ডায়াটারি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, থিয়ামিন এবং নিয়াসিন একাধিক জটিল রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, বেগুন এবং রুটি একসঙ্গে খাওয়া শুরু করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও অসুখই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে আরও একাধিক উপকার মেলে। যেমন ধরুন...
১. হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আর থাকে না:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রুটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এবং অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও আর থাকে না।
২. ধূমপান করার প্রবণতা কমে:
শুনতে আজব লাগলেও একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ধূমপানের অভ্যাস ছাড়াতে বেগুন দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে প্রকাশিক গবেষণা পত্রটি অনুসারে এই সবজিটিতে রয়েছে "ভিটামিন পি পি" নামক এক ধরনের উপাদান, যা শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে "নিকোটিন ডিপেনডেন্সি" কমতে শুরু করে। ফলে স্মোকিং-এর অভ্য়াস ছাড়াতে সময় লাগে না।
৩. ভাবী মায়েদের ডায়েটে বেগুন থাকা মাস্ট:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে বেগুনে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড ভাবী মায়েদের সুস্থ রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি বাচ্চার শরীকে চাঙ্গা রাখতেও সাহায্য করে। এই কারণেই তো গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন বেগুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
৪. ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে:
গম দিয়ে বানানো রুটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬, বি৯ এবং ভিটামিন ই, যা শরীরের অন্দরে এই সব ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই সবকটি ভিটামিনই যে নানাভাবে শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে...!
৫. ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
ওজন কমাতে কিন্তু দারুন ভাবে সাহায্য করে বেগুন। আসলে এই সবজিটির শরীরে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাওয়ার অভ্যাস কমতে শুরু করে। আর কম খেলে যে ওজনও কমে, সে কথা আর নতুন কী! দাঁড়ান দাঁড়ান এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম বেগুনে মাত্র ২৫ ক্যালরি থাকে। এই পরিমাণ ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই পুজোর আগে যদি ওজন কমানোর বিষয়ে সিরিয়াস হন, তাহলে আদ থেকেই বেহুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান।
৬. ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে গমের রুটির অন্দরে থাকা ভিটামিন ই, ফাইবার এবং সেলেনিয়াম শরীরে ক্যান্সার সেলেদের জন্ম নিতে দেয় না। সেই সঙ্গে টিউমারের সম্ভাবনাও কমায়। ফলে এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, সরকারি পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালেই জানতে পারবেন গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ যে হারে বেড়েছে, তাতে এমন পরিস্থিতিতে রোজের ডায়েটে যে রুটি থাকা মাস্ট, সে বিষয়ে কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই!
৭. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
বেগুনে থাকা ফটোনিউট্রিয়েন্ট সেল মেমব্রেনকে নানাবিধ আঘাত থেকে রক্ষা করে। ফলে মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা হাজারো নিউরো সেলের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। আর এমনটা হওয়ার কারণে ব্রেন পাওয়ার এতটাই বৃদ্ধি পায় যে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধির ধার বাড়তে সময় লাগে না।
৮. এনার্জির ঘাটতি দূর হয়:
অফিসে সেই সকাল থেকে এত কাজের চাপ যে মাথা তুলতে পারেননি। ফলে এনার্জি লেভেল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে? তাহলে তো বন্ধু লাঞ্চে রুটি খাওয়া মাস্ট! কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে গম দিয়ে বানানো রুটির অন্দরে থাকা কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং প্রোটিন নিমেষ ক্লান্তি দূর করে এনার্জির ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. হাড় শক্তপোক্ত হয়:
এই সবজিটির অন্দরে উপস্থিত ফেনোলিক কম্পাউন্ড এবং আরও সব উপকারি উপাদান, যেমন ধরুন আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। সেই সঙ্গে হাড়ের স্বাস্থ্যের এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে বুড়ো বয়সে গিয়ে কোনও ধরনের হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
১০. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
গমের রুটিতে থাকা ফাইবার প্রায় সব ধরনের পেটের রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে বদহজম এবং গ্যাস অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
১১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান ঠিক মতো বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে এদের প্রভাবে ধীরে ধীরে ত্বক কুঁচকে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলি রেখাও প্রকাশ পায়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই ত্বকের সৌন্দর্য কমে যায়। এক্ষেত্রেও বেগুনের অবদানকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে বেগুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ফলে সপ্তাহে ১-২ দিন বেগুন খাওয়ার অভ্যাস করলে ত্বকের সৌন্দর্য তো কমেই না, উল্টো আরও বেড়ে যায়।
১২. কনস্টিপেশনের মতো রোগ দূরে পালায়:
একাধিক কেস স্টাডি করে জানা গেছে নিয়মিত গমের রুটি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ সারতে একেবারে সময়ই লাগে না। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে গমের রুটি যতটা উপকারি, বাজরার রুটি কিন্তু অতটা উপকারি নয়, তাই এই ধরনের রুটি যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
১৩. সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
শুনতে আজ লাগলেও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বেগুন খাওয়া শুরু করলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পায় যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণও দূরে থাকে বাধ্য হয়।
১৪. শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
গমের রুটি খাওয়া অভ্যাস করলে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আসলে গমের অন্দরে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য উপকারি উপদান শরীরে প্রবেশ করার পর পুষ্টির ঘাটতি তো দূর করেই, সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগ ভোগের আশঙ্কাও কমায়, বিশেষত পেটের রোগের প্রকোপ কমাতে ফাইবারের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো বলি বন্ধু, পেটকে যদি ঠান্ডা রাখতে হয়, তাহলে রোজের ডেয়েটে রুটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!
১৫. ডায়াবেটিসের মতো রোগ দূরে থাকে:
আপনার পরিবারে কি এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে? তাহলে আজ থেকেই বেগুন খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত ফাইবার শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
১৬.ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে:
গত এক দশকে সারা বিশ্বজুড়ে যে যে রোগের কারণে সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল ব্লাড প্রেসার। তাই সময় থাকতে প্রয়োজনীয় সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত। আর এক্ষেত্রে বেগুন আপনাকে দারুন ভাবে সাহায্য করতে পারে। প্রসঙ্গত, বেগুনে রয়েছে পটাশিয়াম সহ একাধিক উপকারি খনিজ, যা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে। সেই সঙ্গে শরীরে নুনের পরিমাণও স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকে। ফলে কোনও ভাবেই ব্লাড প্রেসার বাড়ার সুযোগ পায় না।
১৭. পেশীর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
শরীরের অন্দরে থাকা পেশীদের শক্তি বৃদ্ধি পায় তখনই যখন প্রোটিনের চাহিদা মেটে। আর রুটিতে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে, তা খুব সহজেই দেহের অন্দরে এই বিশেষ উপাদানটির ঘাটতি মেটায়, সেই সঙ্গে পেশির গঠনেও কাজে এসে যায়। তাই তো বলি বন্ধু শক্তপোক্ত শরীরের অধিকারী যদি হতে চান, তাহলে নিয়মিত ৩ টে করে রুটি খেতে ভুলবেন না যেন!
১৮.হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
বেগুনে উপস্থিত ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ফ্লেবোনয়েড কোলেস্টরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়।