Just In
World Milk Day 2021 : দুধ খেলে কি সত্যিই লম্বা হওয়া যায়? জেনে নিন
দুধ শরীরের দৈর্ঘ বাড়বেই। আপাত দৃষ্টিতে একথাটা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলেও একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে দুধে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান নানাভাবে এই কাজটি করে থাকে।
বিজ্ঞান বলে আমরা লম্বা হব না বেঁটে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের পারিবারিক ইতিহাস বা জিনের উপর। কিন্তু একথাও ঠিক যে একাধিক এক্সটারনাল ফ্যাক্টরও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন, দুধ শরীরের দৈর্ঘ বাড়বেই।
আপাত দৃষ্টিতে একথাটা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলেও একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে দুধে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান নানাভাবে এই কাজটি করে থাকে। তবে দৈহিক বৃদ্ধি ১৮ বছরের পর যেহেতু হয় না, তাই এই বয়সে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত যদি প্রতিদিন এই পানীয়টি খাওয়া যায় তাহলে লম্বা হওয়া কেউই আটকাতে পারবে না!
দুধ এবা লম্বা হওয়ার সম্পর্ক লুকিয়ে ইতিহাসে:
দুধের সঙ্গে লম্বা হওয়ার যোগ যে বেশ নিবিড়, তা নেদারল্যান্ডের নাগকিরদের দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। ডাচেরা সারাদিনে আর কিছু খাক বা না খাক, দুধ পান করবেই। তাই তো সারা বিশ্বের মধ্যে সব থেক লম্বা হল ডাচেরা এবং বিজ্ঞানিরা বারংবার একথা মেনে নিয়েছেন যে বিশ্বের এই অংশের মানুষদের এমন লম্বা হওয়ার পিছেন দুধ ছাড়া আর কিছুর ভূমিকা নেই। কিছু বছর আগে বি বি সি-তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, শুধু নেদারল্যান্ড নয়, হল্যান্ডের মানুষরা যে এত লম্বা, তার পিছনেও দুধের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই বিজ্ঞান এবং ইতিহাস দুইই প্রমাণ করে যে লম্বা হতে দুধের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ১৮০০ শতকের আগ পর্যন্ত ডাচেদের গড় উচ্চতা ছিল কম-বেশি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। এই সময়ের পর থেকেই কোনও এক আজানা কারণে নেদারল্যান্ডের মানুষরা বেশি বেশি করে দুধ খাওয়া শুরু করল। এক সময় গিয়ে দেখা গেল তারা বিশ্বের বাকি দেশগুলি, এমনকী ভারতীয়দের তুলনাতেও বেশি পরিমাণ দুধ খাচ্ছে। ১৮০০ শতকের পর থেকে ডায়েটের এই পরিবর্তনের কারণে ২০০ বছর পর কি দেখা গেল জানেন? যেখানে একটা সময় ডাচেদের উচ্চতা ৫ ফুট ছিল, সেখানে তাদের গড় উচ্চতা গিয়ে পৌঁছালো ৬ ফুটে। এই উচ্চতা বৃদ্ধির পিছনে বিজ্ঞানিরা দুধের অবদনাকেই স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শুধু ডাচেদের কথা বললে চলবে না। আফ্রিকার বিখ্যাত শিকারিদের গোষ্ঠী মাসাইদেরও মূল খাবার হল দুধ। তাই তো তাদের উচ্চতাও ডাচেদের মতোই ৬ ফুটের কাছাকাছি।
বিজ্ঞান যখন পাশে আছে তখন তো মানতেই হবে:
বেশ কিছু বছর আগে ইজরাইলের হিবরু ইউনির্ভাসিটির করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল লম্বা হওয়ার সঙ্গে দুধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেই গবেষণাটি চলাকালীন একদল বাচ্চাকে প্রতিদিন দুধ খাওয়ানো হয়েচিল, আর আরেক দলকে একেবারে দুধের ধারে কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। দেখা গিয়েছিল যারা দুধ খায়নি, তারা অন্য় দলের বাচ্চাদের তুলনায় প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বেটে। তাই একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে দুধ খেলে উচ্চতা বাড়বেই, আর যদি না খান তাহলেই ভগবানই ভরসা। আসলে দুধে উপস্থিত প্রোটিন,স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আমেরিকায় করা এক গবেষণা কী বলছে দেখা যাক:
দুধ এবং উচ্চতার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে ৯-১১ বছর বয়সি মেয়েদের উপর একটা গবেষণা চালিয়েছিল একদল মার্কিন বিজ্ঞানি। তারা দেখতে চাইছিলেন দুধের সঙ্গে বাস্তবিকই উচ্চতা বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা। বহু বছর ধরে চলা এই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যে মেয়েরা বেশি করে দুধ খেয়েছে তাদের উচ্চতা বেশি বৃদ্ধি পয়েছে বাকিদের তুলনায়।
গর্ভাবস্থায় দুধ পান:
প্রেগন্যান্সির সময় মায়েদের রোজের ডায়েটে দুধ থাকলে বাচ্চা যে লম্বা হবেই সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ডেনমার্কের একদল গবেষকের করা এক স্টাডিতে দেখা গিয়েছে যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি করে দুধ খেয়ে থাকেন, তাদের বাচ্চাদের হাড়ের গঠন এতটাই ভাল হয় যে বেটে হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। তাই তো ভাবী মায়েরা আজ থেকেই দুধ খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন আপনার শারীরিক উন্নতি তো ঘটবেই, সেই সঙ্গে বাচ্চার স্বাস্থ্য যেমন ভাল হবে, তেমনি আগামী দিনে সে লম্বাও হবে।
দুধ নিয়ে কিছু বেশ আকর্ষণীয় তথ্য:
১. দুধ ছিল মানুষের সব থেকে প্রথম খাদ্য। যখন চাষ করা হত না তখন মূলত দুধ খেয়েই আদি মানবেরা নিজেদের পেট ভরাত।
২. আদি কালে গ্রিকেরা মনে করতেন দুধ সাধারণ কোনও পানীয় নয়। এটি একটা ওষুধ। তাই তো সে সময় অলিম্পিয়ানদের প্রতিদিন লিটার লিটার দুধ খাওয়ানো হত। মনে করা হত এমনটা করলে তারা ভাল খেলবেন।
৩. ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই জানা যাবে, মিশরীয় রানী ক্লিয়োপেট্রা প্রতিদিন দুধে স্নান করতেন। তিনি মনে করতেন সুন্দর ত্বকের রহস্য় লুকিয়ে রয়েছে দুধে।
৪. ভারতীয়রা সহ বিশ্বের অনকে দেশের নাগরিকরা মূলত গরুর দুধ খেয়ে থাকেন। তবে অনেকে ভেড়া, ছাগল, উট, বাঁদর,ঘোড়া এবং ইয়াকের দুধও খেয়ে থাকেন।
দুধ এবং শরীর:
১. দুধে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান নানাভাবে আমাদের শরীরের গঠনে সাহায্য করে। তাই তো শুধুমাত্র দুধ খেয়েই অনেক দিন পর্যন্ত সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
২. আমাদের শরীরে উপস্থিত ভাল ব্যাকটেরিয়াদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে দুধের কোনও বিকল্প নেই।
৩. ছোট বয়সে বেশি করে দুধ খেলে বেটে হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
৪. পরিসংখ্যান বলছে, যে যে দেশের নাগরিকরা বেশি বেশি করে দুধ খান, তারা আজ পর্যন্ত সবথেকে বেশি নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। মানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পিছনেও দুধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. শরীরকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চার পর দুধ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কোনও রোগ ছুঁতে পারবে না।
৬. নানাবিধ হাড়ের রোগকে দূরে রাখতে দুধে উপস্থিত ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।