Just In
কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী করা উচিত এবং কী নয়? জেনে নিন
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে, সংক্রমিতের সংখ্যা কমার নামই নিচ্ছে না। পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়ানক আকার ধারণ করছে। মাঝারি থেকে গুরুতর কোভিড সংক্রমণের চিকিৎসায়, রোগীদের ওপর নানান চিকিৎসা পদ্ধতি ও নানান ঔষধি ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে কোভিড মোকাবিলায় স্টেরয়েডের ব্যবহার বেড়েছে। যে সকল রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে অথবা যারা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এই স্টেরয়েড দ্বারা চিকিৎসা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্টেরয়েড মারাত্মক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকর, কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
করোনার চিকিৎসায় কেন স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়?
গুরুতর কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং শ্বাসযন্ত্র, ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যাচ্ছে। স্টেরয়েড হলো এমন একটি ঔষধি, যা সারস-সিওভি-২ ভাইরাসজনিত প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে। স্টেরয়েড রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে না, তবে এটি শরীরের প্রদাহজনিত কিছু অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম।
শরীরে স্টেরয়েড কী কী প্রভাব ফেলে?
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মক রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করলে শরীরে প্রদাহ হয়। শরীরকে রক্ষা করার প্রক্রিয়াতে, শরীরের কিছু অংশে তীব্র ব্যথা, ফোলা ভাব এবং জ্বালা হতে পারে। যার সময় মতো চিকিৎসা না করলে, আরও খারাপ পরিণতি হতে পারে। স্টেরয়েডের ভূমিকা হল, এই প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াগুলিকে হ্রাস করা। যদিও স্টেরয়েড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু এর বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
কোভিড-১৯ ট্রিটমেন্টে স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী করণীয় এবং কী নয়
করোনার চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্টেরয়েড কার্যকর হলেও, এটি কখনোই ডাক্তারের তদারকি ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী করণীয় এবং কী নয়, তা জানা অত্যন্ত জরুরী।
১) স্টেরয়েড কেবলমাত্র চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারিত হলেই গ্রহণ করা উচিত। কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে স্টেরয়েড নেবেন না। কোন সময়, কতটা মাত্রায়, দিনে কতবার এবং কতদিন স্টেরয়েড নেওয়ার প্রয়োজন, তা একমাত্র চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন।
৩) গুরুতর সংক্রমনের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রদাহের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন।
৪) বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়, ডোজ এবং ডিউরেশন, স্টেরয়েডের কার্যকারিতা প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫) সংক্রমনের প্রথম দিকে যদি স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়, তাহলে শরীরে ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যদিও রোগী কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি ভালোর চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি করে।
৬)বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড দেওয়া হলে, ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে যা ভীষণভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
৭) হঠাৎ করে স্টেরয়েড বন্ধ করা কখনই উচিত নয়। একবার স্টেরয়েড দেওয়া শুরু হলে, ওষুধটি যদি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা ধীরে ধীরে স্টেরয়েডের মাত্রা হ্রাস করার পরামর্শ দেন। তবে স্টেরয়েডের মাত্রা কমাতে, অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্টেরয়েডের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েডের দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলি হল
১) রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
২) ঘুমের অসুবিধা, মুড সুইং এবং শরীরে অস্থিরতা।
৩) বিরক্তি এবং উদ্বেগ অনুভূতি।
৪) বদহজম এবং অম্বলের সমস্যা।
৫) খিদে বাড়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি।