Just In
করোনা ভাইরাস : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান, সুস্থ থাকুন
বর্তমানে করোনার কালো ছায়া গোটা বিশ্বজুড়ে। লাফিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। ফলে আতঙ্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সাধারণ মানুষের মন থেকে।
বাঁচার তাগিদে সকলেই মেনে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া উপদেশ সমূহ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তারাই নোভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম হবেন। যে সকল মানুষের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম তাদের পক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলার পাশাপাশি নিজের ইমিউনিটি বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, করোনা থেকে বাঁচতে বারবারই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সুতরাং, উচ্চ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মেনে চলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অনেকাংশেই সহায়তা করতে পারে।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কী খাবেন? তবে চলুন দেখে নেওয়া যাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু ভেষজ ও ফলের গুনাগুন সম্পর্কে। যা খেলে দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়তে পারে আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার।
১) ভিটামিন সি যুক্ত খাবার
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই সংকটজনক অবস্থায় নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। যেমন, কাঁচা আপেল, গাজর, কমলালেবু, ব্রকলি, বেল মরিচ এবং পেঁপে ইত্যাদি। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যুক্ত কোন খাবারগুলো খাওয়া প্রয়োজন তা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
২) আদা
এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ থাকায়, এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত ফ্লু- এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
আদা শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাক যন্ত্রের কার্যকলাপকে উন্নত করে। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জনিত রোগ যেমন - ঠান্ডা লাগা, ফ্লু -এর মতো লক্ষণ, বুকের সংক্রমণ এবং মুখের ঘা আটকাতে সাহায্য করে। এসমস্ত লক্ষণগুলি করোনা ভাইরাস এর ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
করোনা ভাইরাস : সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চান? দেখে নিন স্বাস্থ্যকর থাকার উপায়গুলি
৩) রসুন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে রসুন এর বিকল্প হতে পারে না। কারণ, রসুনে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন- সি ও ভিটামিন - এ, খনিজ, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়াম। এর পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতিও সঠিক রাখে।
৪) মাশরুম
মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ভিটামিন ও মিনারেল। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি মাশরুমে থাকে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল। মাশরুমে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি-১২, পটাসিয়াম ও সেলেনিয়াম, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও রক্তের শ্বেত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। আরে এই শ্বেত রক্তকণিকা দেহে অসুখ-বিসুখ এর সঙ্গে লড়াই করে।
৫) হলুদ ও দুধ
হলুদ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন নামক এক ধরনের উপাদান, যা ১০০-রও বেশি রোগ সারাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই, ভিটামিন সি-এর তুলনায় অনেকগুণ বেশি কার্যকরী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কারকিউমিন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
দুধের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন ও মিনারেল,যা দেহের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে, পাশাপাশি দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
সুস্থ থাকতে তাই রোজ শুধু দুধ ও হলুদ খেতে পারেন অথবা এক কাপ দুধের সঙ্গে পরিমাণমতো হলুদ মিশিয়ে মিশ্রণটি পান করতে পারেন।
৬) কৃষ্ণ তুলসী
তুলসী রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসি-তে থাকা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই রোজ নিয়মমাফিক তুলসী পাতা খান।
এছাড়া, অ্যাভোকাডো (ভিটামিন বি-১, সি, এ), বার্লি ও ওটস্ (বিটা-গ্লুক্যান ফাইবার), নারকেল (লরিক অ্যাসিড), বেরি (অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট), কিউই ফল, দেশি ঘি ও মধু, বাদাম, আমন্ড, কাঁচা ছোলা, পাকা কলা ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে লড়তে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন
১) সবুজ শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন শাকসবজি।
২) দুগ্ধজাত খাবার যেমন টক দই, ঘি বা মাখন খান। কারণ, এই সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বজায় থাকে।
৩) সজনে ডাঁটা ও সজনে ফুল ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য অত্যন্ত উপকারি। তাই এই সময় নিয়মিত এগুলি পাতে রাখুন।
৪) ডাল, দানাশস্য, এই জাতীয় খাবার রোজ খান।
কী করবেন ও কী করবেন না তা দেখে নিন
১) ধূমপান এবং মদ্যপান করবেন না।
২) বাইরের খাবার অর্থাৎ জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করুন।
৩) অতিরিক্ত চিনি ও নুন মেশানো খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৪) মাংস বা ডিম অর্ধেক সিদ্ধ করে খাবেন না। মাংসকে ভালোভাবে রান্না করে খান। ডিমকে হাফ বয়েল করে খাবেন না, পুরোপুরি সেদ্ধ করে তারপর খান।
৫) বাজারের প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
৬)নিজের চাহিদা ও পরিমান মতো জল পান করুন।