Just In
আলু কি শরীরের জন্য আদৌ ভাল?
আমরা বেশিরভাগই আলুকে ফ্রাই করে অথবা সেদ্ধ আলুর সঙ্গে মাখন, ক্রিম বা চিজ খেয়ে থাকি আমরা। আর একথা তো সকলেরই জানা আছে যে ভাজা জিনিস এবং মাখন বা মার্জারিন শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়।
আমাদের রোজের বন্ধু আলুকে কী একেবারেই শরীরের পক্ষে ভাল নয়? নানা কারণ বেশ কিছু বছর ধরেই এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সঠিক উত্তর কারও জানা নেই। তাই তো এই প্রবন্ধে আলুর ভাল-মন্দের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করা হল। লেখাটি পড়ার পর সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি! কিন্তু আলুকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো কি?
সারা বছর ধরে চাষ হওয়া এই সবজিটি সোলানসিয়ে পরিবারের অংশ। এই একই পরিবারের বাকি সদস্য়রা হল টমাটো, বেগুন, গোলমরিচ এবং টোমাটিলোস। কিন্তু প্রশ্ন হল টমাটো খেলে যে শরীরের উপকারে লাগে, সেই একই উপকার কি আলু খেলেও পাওয়া যায়?
আলু এবং শরীর:
আমরা বেশিরভাগই আলুকে ফ্রাই করে অথবা সেদ্ধ আলুর সঙ্গে মাখন, ক্রিম বা চিজ খেয়ে থাকি আমরা। আর একথা তো সকলেরই জানা আছে যে ভাজা জিনিস এবং মাখন বা মার্জারিন শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। এই ধরনের উপাদান যত শরীরে প্রবেশ করবে, তত কোলেস্টেরল, হার্ট ডিজিজ এবং বাকি সব লাইফ স্টাইল ডিজিজের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাই বলে আলুকে খারাপ বলা বোকামি হবে। কারণ এই সব উপাদানকে বাদ দিয়ে যদি এই সবজিটি খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের কোনও খারাপই হয় না, বরং নানাভাবে ভালই হয়। কীভাবে? আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-বি৬, পটাশিয়াম, কপার, ভিটামিন-সি, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ফাইবার এবং প্যানটোথেনিক অ্যাসিড। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে নানাভাবে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ, ক্যারোটিনয়েড, ফ্লেবোনয়েড প্রভৃতি। এই সবকটি উপাদান শরীরে উপস্থিত বিষ বা টক্সিনের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে:
যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন আলু খাওয়া উচিত। কারণ এই সবজিটিতে রয়েছে তিতোয়ামিনেস নামে একটা উপাদান, যা ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো অনেক বিজ্ঞানিই আলুকে "বিশ্বের সবথেকে স্বাস্থ্যকর খাবার" এর তকমা দিয়েছেন।
কোষের গঠনে বিশেষ ভূমিকা নেয়:
আলুতে উপস্থিত ভিটামিন-বি৬ কোষের গঠনে সারাক্ষণ কাজ করে যায়। সেই সঙ্গে কোষের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং নিউক্লেয়িক অ্যাসিডের সিন্থেসিসের জন্যও ভিটামিন বি৬-এর প্রয়োজন পরে। এবার বুঝতে পারছেন তো এই বিশেষ ভিটামিনটির অভাবে আমাদের শরীরে কত ক্ষতি হতে পারে।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
নার্ভাস সিস্টেম যাতে এক নার্ভ থেকে আরেক নার্ভে ঠিক মতো বার্তা পৌছে দিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখে ভিটামিন বি৬। সেই সঙ্গে ব্রেন সেলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এই ভিটামিনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একথা তো জেনেই গেছেন যে আলুতে এই বিশেষ ধরনের ভিটামিনটি প্রচুর পরিমাণে থাকে। ফলে আলু খেলে ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, আলুতে উপস্থিত ভিটামিন বি ৬ সেরাটোনিন নামে একটি উপাদানের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেরাটোনিনের অভাবের কারণে মানসিক অবসাদের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এখানেই শেষ নয়, ভাল রকম ঘুম হওয়ার জন্য মেলাটোনিন নামে এক ধরনের উপাদানের প্রয়োজন পরে। এটির ঘাটতি মেটাতেও আলু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টকে সুস্থ রাখে:
আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত এমন কিছু উপাদানের জন্ম হয়, যা ব্লাড ভেসেল এবং হার্টের উপর কু-প্রভাব ফেলে। এই ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের কর্মক্ষমতা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয় আলুতে উপস্থিত ভিটামিন বি৬। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের হার্ট ডিজিজ এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমাতেও এই ভিটামিনটি দারুন কাজে লাগে। প্রসঙ্গত, ১ টা সেদ্ধ আলু, খোসা সমেত খেলে শরীরে ৩ গ্রাম ফাইবার প্রবেশ করে, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, নানা ধরনের পেটের রোগের প্রকোপ কমায়, বাজে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
আলু খেলে ওজন বাড়ে না:
অনেকেই বলে থাকেন,"আলু খেলেই নাকি শরীর আলুর মতো হয়ে যাবে।" এই ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। কারণ শুধুমাত্র আলু খেলে ওজন বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। কিন্তু কেউ যদি কিলো কিলো আলু ভাজা খান বা আলু সেদ্ধর সঙ্গে মাখন দিয়ে খান, তাহলে তো ওজন বাড়বেই। প্রসঙ্গত, একটা মাঝারি মাপের আলুতে প্রায় ১৬৩ ক্যালোরি থাকে। তাই তো আলুর সঙ্গে এমন কোনও খাবার খাওয়া উচিত নয়, যাতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি রয়েছে। এমনটা করলে শরীরে ক্যালোরি জমতে শুরু করবে। ফলে ওজন বাড়বে। কাই হিসেব করে কাবার কেতে হবে। যেমন ধরুন অনেকেই আলু ভাজার সঙ্গে বার্গার খেয়ে থাকেন। এই দুটি খাবার এক সঙ্গে খেলে শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ওজনও বাড়বে। তবে আমরা, মানে বাঙালিরা যেভাবে আলুকে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করে থাকি, তাতে ওজন বাড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।