Just In
পরিবেষ দূষণ এবং বিষাক্ত খাবার খেয়েও যদি সুস্থভাবে বাঁচতে চান তাহলে এই পানীয়টি খেতে ভুলবেন না যেন!
জবা ফুলে এমন কী আছে, যা শরীরের এত উপকারে লাগে! তাহলে জেনে রাখুন বন্ধু, এই ফুলটির শরীরে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, নানাবিধ মিনারেল, নিয়াসিন, ফলেট, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়াম।
কী পানীয়? হলফ করে বলতে পারি নামটা শুনলে হলে আবাক হয়ে যাবেন। কারণ যে ফুলটি দিয়ে এই পানীয়টি বানাতে হবে সেটি দুর্গা পুজো এবং কালী পুজোর সময় মায়ের পায়ে চড়ানো হলেও এটি দিয়ে যে এমন পানীয় বানানো যায় এবং সেটি শরীরের কাজে লাগে সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না।
কোন ফুলের কথা বলছি তাই ভাবছেন নিশ্চয়? সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খেলে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে একাধিক ভয়ঙ্কর রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। এমনকী পরিবেশ দূষণের কারণে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
এত দূর পড়ার পর যদি ভাবেন জবা ফুলে এমন কী আছে, যা শরীরের এত উপকারে লাগে! তাহলে জেনে রাখুন বন্ধু, এই ফুলটির শরীরে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, নানাবিধ মিনারেল, নিয়াসিন, ফলেট, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম এবং প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে...
১. ক্য়ান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে জবা ফুলের অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রটোক্যাটেচিক অ্যাসিড, যা শরীরে প্রবেশ করার পর দেহে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানদের মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপদানদের শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে এমন মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
২. পিরিয়োডের কষ্ট কমায়:
মাসের এই বিশেষ সময় যদি নিয়মিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়া যায়, তাহলে পিরিয়োড ক্র্যাম্প এবং যন্ত্রণা অনেকটাই কমে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অস্বস্তিও দূর হয়। প্রসঙ্গত, হরমোনাল ইমব্যালেন্স কমাতেও এই পানীয়টি দারুন কাজে আসে। তাই মেয়েরা যদি প্রতিদিন এই চাটি পান করতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার মেলে।
৩. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘাটতে এই পানীয়টির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জবা ফুলে উপস্থিত ডিউরেটিক প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষুধটি দারুন কাজে আসে কিন্তু!
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
আজকের পরিস্থিতিতে যেখানে যুব সমাজের সিংহভাগই প্রেসারের রোগে ভুগছে, সেখানে জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রসঙ্গত, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় এই বিশেষ চাটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ নিমেষে রক্তচাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যারা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন, তারা দিনে যদি একবার জবা ফুলের চা খান, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার পেতে পারেন।
৫. মানসিক অবসাদ কমায়:
নানা কারণে মনটা কি বেজায় খারাপ? তাহলে ঝটপট এক কাপ হিবিস্কাস টি বানিয়ে ফেলে পান করে ফেলুন। এমনটা করলে দেখবেন মুড একেবার ফ্রেশ হয়ে যাবে। কারণ এতে উপস্থিত উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেল নার্ভাস সিস্টেমে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি অ্যাংজাইটি কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন কমতে সময় লাগে না।
৬. ওজন কমায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হিবিস্কাস টি খেলে শরীরে শর্করা এবং স্টার্চের শোষণ কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কয়েকজন গবেষক এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আরেকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। তাদের মতে জবা ফুলের চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে অ্যামিলেস নামক একটি উপাদানের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
৭. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:
ব্লাড প্রেসারের বেস্ট ফ্রেন্ড কে জানা আছে? না, কে বলুন তো? কে আবার কোলেস্টেরল। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যেসব ছেলে-মেয়েরা আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগকে দিনের নানা সময় কাজ করতে হয়। ফলে কাজের চাপে একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসার উর্ধমুখী হয়, তেমনি এদিক-সেদিকের খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে বাড়তে থাকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে হার্টের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে কম বয়সে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতির শিকার যদি আপনি হতে না চান, তাহলে আজ থেকেই জবা ফুলের চা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হার্টের কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ এই পানীয়টি ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ব্রেন এবং হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
৮. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজে ঠাসা:
জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড, যা একদিকে যেমন ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এখানেই শেষ নয়, এই চায়ের অন্দরে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরের অন্দর মহলে প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও বাঁচায়। সেই কারণেই তো সর্দি-জ্বরের প্রকোপ কমাতে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
৯. লিভার চাঙ্গা হয়ে ওঠে:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে জবা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টিক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।
জবা ফুল দিয়ে কীভাবে বানাতে হবে চা-টা:
এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো জবা ফুলের পাপড়ি নিয়ে প্রথমে সেগুলিকে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর তা গরম জলে ফেলে কম করে ৫ মিনিট ফোটাতে হবে। যখন দেখবেন জলটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন জলটা ছেঁকে নিয়ে চায়ের মতো সেটি পান করতে হবে। প্রসঙ্গত, এই পানীয়টির মধ্যে যদি অল্প করে লবঙ্গ, আদা বা এলাচ ফেলে খাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু আরও বেশি উপকার মেলে।