Just In
দাদ-হাজা-চুলকানির চোটে জেরবার? এমন রোগ সারাতে দারুন কাজে আসে এই ৮ টি ঘরোয়া পদ্ধতি!
অল্প করে রসুনের কোয়া নিয়ে সেগুলিকে ছোট ছোট করে কেটে নিন। তারপর সেগুলিকে দাদের উপর রাখুন এবং ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। এমনটা সারা রাত রাখলেই দেখবেন ফল পেতে শুরু করেছেন।
গরম যখন বাড়ছে তখন বেশ কিছু ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকার সহজ উপায় না জেনে নিলে কিন্তু মুশকিল। এখন পারদের কাঁটা প্রায় ৪০ ছুঁই ছুঁই। এমন সময় ঘামের প্রকোপে আমাদের শরীরে বেশ কিছু ফাঙ্গাস এসে বাসা বাঁধে। যাদের করণে দাদ-হাজা চুলকানির মতো কষ্টকর ত্বকের রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই সাবধান!
প্রশ্ন করতেই পারেন কীভাবে এই কাজটি করবেন, তাই তো? এই উত্তর পাবেন। তবে তার আগে জেনে নেওয়া ভাল যে রিং ওয়ার্ম বা দাদ ঠিক কী জিনিস! চিকিৎসা পরিভাষায় ডার্মাটোফাইটোসিস নামে পরিচিত এই রোগ মূলত কিছু ফাঙ্গাসের কারণে হয়ে থাকে। এমন রোগ সাধারণত শরীরের যে কোনও অংশে হতে পারে। তবে নখ, ত্বক এবং স্কাল্পে বেশি হতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, এই রোগটি ছোঁয়াচে। তাই বাড়ির কারও হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। না হলে অল্প দিনেই বাকি সদস্য়দেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
রিং ওয়ার্ম বা দাদকে তার প্রকৃতি অনুযায়ী সাধারণত ৭ টি ভাগে ভাগ করা হয়। স্কাল্পে যে দাদ হয় তাকে টিনিয়া ক্যাপিটিস বলা হয়ে থাকে। হাতে হলে তাকে টিনিয়া মেনুস এবং পায়ে হলে টিনিয়া পেডিস নামে ডাকা হয়ে থাকে। আর যদি নখে এই রোগ হয়, তাহলে তাকে চিকিৎসা পরিভাষায় টিনিয়া আনগুইয়াম বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় কুঁচকি এবং মুখেও দাদের আক্রমণ হতে পারে। তাদের যথাক্রমে টিনিয়া ক্ররিস এবং টিনিয়া ফেসিই নামে চিহ্নিত করে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, শরীরের নানা অংশে গোলাকার, লালচে ধরনের যে দাদ হয়, তাকে টিনিয়া কর্পোরিস নামে ডাকা হয়ে থাকে।
আধুনিক মেডিসিনের সাহায্যে রিং ওয়ার্মের চিকিৎসা করা যেতে পারে। তাতে কাজও দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘরোয়া উপাদান দারুন কাজে দেয়। তাই গরমে যদি এমন রোগের শিকার হন কেউ, তাহলে নিশ্চিন্তে কাজে লাগাতে পারেন এই প্রবন্ধে আলোচিত ঘরোয় পদ্ধতিগুলিকে। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। এক্ষেত্রে যে যে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি দারুন উপকারে লাগে, সেগুলি হল...
১. রসুন:
এতে রয়েছে অ্যাজুইনা নামে এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা যে কোনো ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে দারুন কাজে লাগে। তাই তো রিং ওয়ার্মের ক্ষেত্রেও এই সবজিটি দারুন উপকারে লাগে। এক্ষেত্রে অল্প করে রসুনের কোয়া নিয়ে সেগুলিকে ছোট ছোট করে কেটে নিন। তারপর সেগুলিকে দাদের উপর রাখুন এবং ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। এমনটা সারা রাত রাখলেই দেখবেন ফল পেতে শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত, রসুনের কোয়ার পেস্ট বানিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
২. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার:
একটা ছোট পাত্রে অল্প করে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিন প্রথমে। তারপর তাতে তুলো ভিজিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করুন। এমনটা দিনে কয়েক বার করলেই দেখবেন সমস্যা কমতে শুরু করে দিয়েছে। আসলে বিশেষ ধরনের এই ভিনিগারটিতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রপাটিজ রয়েছে, যা এমন ধরনের সংক্রমণ কমাতে দারুন কাজে আসে।
৩. নারকেল তেল:
একেবারে ঠিক শুনেছেন। এই প্রাকৃতিক তেলটিও দাদের প্রকোপ কমাতে দারুন উপকারে লাগে। আসলে এই তেলটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা এমন ধরনের ত্বকের রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে নারকেল তেলকে? রাতে শুতে যাওয়ার আগে যে জায়গায় দাদ হয়েছে সেখানে অল্প করে নারকেল তেল লাগিয়ে শুয়ে পরুন। সকালে উঠে জয়গাটা ধুয়ে দিন। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন ফল পেতে শুরু করেছেন।
৪. সরষে বীজ:
আকারে ক্ষুদ্র হলে কী হবে। এমন ধরনের রোগের প্রকোপ কমাতে সরষে বীজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। পরিমাণ মতো সরষে বীজ নিয়ে কম করে ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। সময় হয়ে গেলে সরষে বীজগুলো সংগ্রহ করে বেটে নিন। তারপর সেই পেস্টটা ক্ষত স্থানে লাগান। এমনটা কয়েক দিন করলেই মিলবে সুরাহা।
৫. হলুদ:
এতে রয়েছে বিপুল মাত্রায় অ্যান্টি-বায়োটিক প্রপাটিজ, যা এই ধরনের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে প্রথমে অল্প করে হলুদ জল বানিয়ে নিন। তারপর তাতে তুলে চুবিয়ে যে যে জায়গায় দাদ হয়েছে, সেখানে আলতে করে লাগাতে থাকুন। প্রসঙ্গত, দিনে কমে করে ৩ বার এমনটা করলে রোগ সেরে যেতে শুরু করবে দেখবেন।
৬. ভিনগার আর নুন:
পরিমাণ মতো নুনের সঙ্গে অল্প করে ভিনিগার মিশিয়ে একটা পেস্ট বিনিয়ে নিন। তারপর সেই পেস্ট রিং ওয়ার্মের উপর লাগিয়ে কম করে ৫ মিনিট রেখে দিন। এমনটা প্রতিদিন করলেই দেখবেন ৭ দিনেই রোগ সেরে যাবে।
৭. অ্যালো ভেরা:
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শুধু নয়, ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে রাতে শুতে যাওয়ার আগে অ্যালো ভেরা পাতা থেকে পরিমাণ মতো জেল সংগ্রহ করে দাদের উপর সরাসরি লাগাতে হবে। সারা রাত রেখে পর দিন সকালে ধুয়ে ফলতে হবে। প্রতিদিন এই ঘরোয়া চিকিৎসাটি করলে অল্প দিনেই দেখবেন রোগ সেরে গেছে।
৮. টি ট্রি অয়েল:
এতে রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা শুধু রিং ওয়ার্ম নয়, আরও বেশ কিছু ত্বকের রোগ সরাতে দারুন উপকারে লাগে। ছোট একটা বাটিতে এই তেল নিয়ে তাতে তুলো চুবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগন। দিনে কম করে ৩ বার এইভাবে দাদের উপর টি ট্রি অয়েল লাগালে রোগ সারতে একেবারে সময়ই লাগবে না।